ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রকৃত নাম কী? কোন প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন?

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্বাক্ষর করতেন ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা নামে। তিনি সংস্কৃত কলেজ থেকে (১৮৩৯ সালে) ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেন। তার অনুবাদ গ্রন্থ: ‘বেতালপঞ্চবিংশতি’, ‘শকুন্তলা’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’। তার বিখ্যাত শিশুতোষ গ্রন্থ ‘বর্ণপরিচয়’।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০–১৮৯১) ছিলেন একজন বাঙালি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক, মানবতাবাদী ও রেনেসাঁস-যুগের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি বাংলার নবজাগরণে অসামান্য অবদান রেখেছেন।


🔹 সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

  • পুরো নাম: ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
  • উপাধি: বিদ্যাসাগর (শাস্ত্রে ও জ্ঞানে “সমুদ্রসম” জ্ঞানের জন্য কালীঘাট সংস্কৃত কলেজ কর্তৃক প্রদত্ত)
  • জন্ম: ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০, বীরসিংহ গ্রাম, মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ
  • মৃত্যু: ২৯ জুলাই ১৮৯১, কলকাতা

🎓 শিক্ষা জীবন:

  • ছোটবেলায় দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হলেও অসাধারণ মেধার জন্য অল্প বয়সেই সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন।
  • সংস্কৃত ব্যাকরণ, সাহিত্য, যুক্তি, ধর্মশাস্ত্র—সব শাস্ত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।
  • ২১ বছর বয়সে “বিদ্যাসাগর” উপাধি পান।

📚 অবদান:

১. শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান:

  • বাংলা গদ্যরীতির জনক: বাংলা গদ্যকে সহজ ও সরল করে সাধারণ মানুষের উপযোগী করেন।
  • প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার: বহু স্কুল স্থাপন করেন, বিশেষত মেয়েদের জন্য।
  • পাঠ্যপুস্তক রচনা:
    • বর্ণপরিচয় (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ) – আজও জনপ্রিয়।
    • কথামালা, শিক্ষাসার, অঙ্কগণিত ইত্যাদি।

২. সমাজসংস্কার:

  • বিধবা পুনর্বিবাহ আন্দোলন:
    • সমাজে বিধবাদের পুনর্বিবাহের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন।
    • তার প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালে “বিধবা বিবাহ আইন” পাস হয়।
  • বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ বিরোধিতা
  • নারীশিক্ষা প্রসারে জোর দেন এবং বহু কন্যাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।

৩. মানবতাবাদ ও ব্যক্তিত্ব:

  • কঠোর নীতিবান, সত্যনিষ্ঠ ও দয়ালু ছিলেন।
  • বহু অনাথ, দরিদ্র মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন, নিজের সম্পদ দান করেছেন।

🏛️ কর্মজীবন:

  • সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ও পরে প্রধান শিক্ষক
  • পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও বিভিন্ন সরকারি পদে কাজ করেছেন।

🏅 শ্রদ্ধাঞ্জলি ও প্রভাব:

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে বলেছেন, “সাধু–মানুষের প্রতীক”।
  • তার চিন্তা ও আদর্শ আজও শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে প্রেরণা দেয়।
  • ভারতের নানা স্থানে তার মূর্তি ও নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান আছে (যেমন: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়)।

📝 বিখ্যাত উক্তি:

করুণার যুগ্যতা নাই, করিতে হইবে।
– মানে: কারো প্রতি দয়া করার জন্য কোনো যোগ্যতা খুঁজে নিতে হয় না, এটা করতেই হয়।


Leave a Reply