উত্তর:
মধ্যযুগে বাংলা কাব্যে অন্তত চারজন চণ্ডীদাসের কবিতা পাওয়া যায়। এরা হলেন: বড়ু চণ্ডীদাস, দ্বিজ চণ্ডীদাস, দীন চণ্ডীদাস, চন্ডীদাস। এই চারটি নামের মধ্যে শেষ তিনটি নাম একজনের নাকি তাঁরা পৃথক কবি তা নিশ্চিত করে আজও বলা যাচ্ছে না। এই সমস্যাকেই ‘চণ্ডীদাস সমস্যা’ বলে।
‘চণ্ডীদাস সমস্যা’ বলতে ইতিহাস ও সাহিত্যচর্চায় এক ধরনের বিতর্ক বা দ্বিধার কথা বোঝায়, যা প্রাচীন বাঙালি কবি চণ্ডীদাস-কে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে। এই সমস্যাটি মূলত তিনটি বিষয়ে কেন্দ্রীভূত:
১. একজন না একাধিক চণ্ডীদাস?
চণ্ডীদাস নামে একজন কবি ছিলেন, নাকি তিনজন ছিলেন — এ নিয়ে মতভেদ আছে।
- কেউ বলেন, বরদী চণ্ডীদাস, রাম চণ্ডীদাস এবং দীন চণ্ডীদাস নামে তিনজন ভিন্ন কবি ছিলেন।
- আবার কেউ বলেন, একই ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন নামে পরিচিত ছিলেন বা ভুলভাবে আলাদা করে দেখা হয়েছে।
২. মূল চর্যাগ্রন্থ ও রচনাসমূহ কার?
চণ্ডীদাস নামে যে সব পদাবলী পাওয়া যায়, সেগুলোর মূল রচয়িতা কে, সেটাও বিতর্কিত।
- অনেক সাহিত্যিক মনে করেন, চর্যাগীতি ও বৈষ্ণব পদাবলীর একটি বড় অংশই একজন বিশেষ চণ্ডীদাসের রচনা,
- অন্যদিকে কেউ কেউ বলেন, এগুলো বিভিন্ন চণ্ডীদাসের রচনার সংমিশ্রণ।
৩. ঐতিহাসিক ও স্থানগত দ্বন্দ্ব:
- চণ্ডীদাসের জন্মস্থান নিয়েও মতভেদ রয়েছে:
- কেউ বলেন, তিনি বীরভূম জেলার (নানুর বা চরিচাঁদপুর) বাসিন্দা ছিলেন।
- আবার অনেকে মনে করেন, তিনি ছিলেন বর্ধমান জেলার বরদা গ্রামের কবি।
- ফলে তাঁকে বরদী চণ্ডীদাস বা নানুবাড়ি চণ্ডীদাস বলা হয়।
সংক্ষেপে:
‘চণ্ডীদাস সমস্যা’ বলতে বোঝায়—চণ্ডীদাস নামে একজন কবি ছিলেন নাকি একাধিক, তাঁদের আসল রচনা কোনটি, এবং তাঁদের সঠিক পরিচয় কী—এই নিয়ে ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিকদের মধ্যে যে দীর্ঘকালীন মতভেদ ও বিতর্ক রয়েছে, তাকেই বোঝানো হয়।
প্রসঙ্গত, এই সমস্যা বাংলা মধ্যযুগীয় সাহিত্যচর্চায় একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়।
অতিরিক্ত জানতে চাইলে:
- চণ্ডীদাসের পদাবলীর বৈশিষ্ট্য
- চণ্ডীদাস ও রাধা-কৃষ্ণ ভাবধারার প্রভাব
- সাহিত্যিক দ্বন্দ্বে বঙ্কিমচন্দ্র বা দীনেশচন্দ্র সেনের মতামত — এগুলোতেও আলো ফেলা যায়।